শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

হজসেবায় নিয়োজিতদের প্রতি পরামর্শ

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত পবিত্র হজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক ভয়ংকর সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের কাছে লাখ লাখ হজ ও ওমরাযাত্রী নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত; কিন্তু তাদের প্রতিকার পাওয়ার পথ নেই। সবাই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। অধিকাংশ সময় তারা হজযাত্রীদের ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে দাপটের সঙ্গে এ ব্যবসা করে যাচ্ছে। অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যের মতো বাজারজাতকরণের জন্য রয়েছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট, হজযাত্রী পরিবহন সিন্ডিকেট এবং সৌদি আরবে বাসাভাড়া ও অন্যান্য সেবাকেন্দ্রিক প্রতারণা ক্ষেত্রবিশেষ হজযাত্রীদের জমা দেওয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানাবিধ অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে।

এমন পরিস্থিতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক একজন জানতে চেয়েছেন, ‘আমার আব্বা হজের ব্যবসা করেন, লাইসেন্স আছে। পৈতৃক সূত্রে আমাকে এই ব্যবসা দেখাশোনা করতে হয়। হাজিদের খেদমত করতে হয়। আমি জানতে চাই, কীভাবে এ খেদমতটা সুন্দর করে করতে পারি? যাতে আমার কাজ সুন্দর হয়। এটাই আমার রুজির মাধ্যম, কীভাবে করলে ভালো হয়।’

তার উত্তরে আমাদের পরামর্শ হলো-

প্রথমেই নিয়ত পরিশুদ্ধ রাখতে চেষ্টা করুন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সেবাই হবে আপনার উদ্দেশ্য।

হজ ও ওমরাযাত্রীদের তাই প্রতিশ্রুতি দিন, যা পূর্ণ করতে পারবেন। কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবেন না।

কখনো মিথ্যা কথা বলবেন না, কোনো মিথ্যা তথ্য সরবরাহ ও লুকোচুরি করবেন না।

নিজের ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের চেয়ে হাজিদের আরাম-আয়েশ ও সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দেবেন। এর ভেতরে হালাল টাকাও এসে যাবে, তাতেই অনেক বরকত হবে- ইনশাআল্লাহ।

সবর ও সহনশীলতাকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরুন। নানা মেজাজের ও নানা শ্রেণির লোক হজে যায়, তাদের যৌক্তিক অযৌক্তিক দুর্ব্যবহারকে হজম করে যাবেন। কখনো প্রতিশোধ নিতে যাবেন না।

টিমলিডার হিসেবে কখনোই হজযাত্রীদের পরস্পর ঝগড়ায় সালিশ হতে যাবেন না, কিংবা কারও পক্ষে কথা বলবেন না। বরং উভয়ের ঝগড়া থামাতে চেষ্টা করবেন এবং তাদের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন।

ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নিজের কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেলে সেটা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করুন এবং হাজিদের সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করুন।

প্রতিশ্রুতিমতো সেবা দিতে না পারলে, কিছু টাকা ফেরত দিয়ে দিন, যদি ক্ষতির আর্থিক মূল্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

মজলুমের বদদোয়া থেকো সর্বাত্মক বাঁচতে চেষ্টা করুন।

হাজিরা হলেন আল্লাহর মেহমান। তাদের দোয়া যেমন কবুল হয়, তেমনি বদদোয়াও। কাজেই আল্লাহর ঘরের সামনে তার মেহমানের বদদোয়া থেকে নিজেকে এবং নিজের বংশধরকে অবশ্যই বাঁচাতে চেষ্টা করবেন।

বার বার মক্কা-মদিনায় যাওয়ার কারণে যেন এ স্থানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কখনোই কমে না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন। এটা অনেক বড় দ্বীনি ক্ষতি। বরং দিন দিন যেন হারামাইনের মহব্বত এবং নিজের আধ্যাত্মিক উন্নতি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আপনি অবশ্যই এক বা একাধিক বিজ্ঞ আলেমকে আপনার পরামর্শক হিসেবে গ্রহণ করবেন। তাদের সঙ্গে নামকাওয়াস্তে সম্পর্ক কিংবা নামবিক্রির সম্পর্ক নয়, বাস্তবিক গভীর সম্পর্ক রাখুন এবং তাদের পরামর্শ মেনে চলুন।

হজ-ওমরা চলাকালে আপনি নিশ্চিত না জেনে কোনো মাসয়ালা বলবেন না। বরং অভিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হবেন, অথবা আলেমদের থেকে জেনে তাদের জানাবেন।

নতুন হজ-ওমরাযাত্রীদের তাদের আমলগুলো যথাযথ করেছেন কি না, খোঁজখবর রাখবেন। হজ, ওমরা ও জিয়ারতে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

অজ্ঞতা, অলসতা কিংবা আপনার কষ্ট বা অর্থ খরচের ভয়ে জিয়ারতকারীদের কোনো ক্ষেত্রে মিসগাইড করবেন না। কোনো মাসয়ালা বা করণীয় লুকাবেন না।

হজের দম বা কোরবানির ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে থাকলে তা অবশ্যই নিজ দায়িত্বে যথাসময়ে আদায় করবেন। কোরবানি শেষ করার আগে যে হজযাত্রী হলক (মাথা মু-ন) করতে না পারেন, সেদিকে খেয়াল করবেন।

আপনি হানাফি ফিকহের অনুসারী হয়ে থাকলে সে ফিকহ অনুযায়ী চলবেন এবং মাসয়ালা বলবেন। ওখানে নানা রকমের মাজহাব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না এবং সঙ্গীদের বিভ্রান্ত করবেন না।

১৮. সর্বোপরি হজকে সেবা হিসেবে গ্রহণ করুন, ব্যবসা হিসেবে নয়। পরিচয় দিতে বলুন, ‘হজসেবা’ ‘হজব্যবসা’ নয়। এ শব্দকে হজের মতো মহিমান্বিত ইসলামের রুকনের আদব পরিপন্থী মনে করি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION